আমার উম্মতের মাঝে ৭৩ টি দল হবে এদের মাঝে মাত্র একটি দল জান্নাতে যাবে" এই হাদীস টির মূল ব্যাখ্যা টা কি ?
"আমার উম্মতের মাঝে ৭৩ টি দল হবে এদের মাঝে মাত্র একটি দল জান্নাতে যাবে" তিরমীযি শরীফে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এই হাদীস টিকে আমরা অনেকেই ব্যাখ্যা হিসাবে এরকম ভাবে বলি থাকি যেমন যারা তাবলীগ জামাত করে তারা বলে তারাই হল সেই হকপন্থী দলটি যাদের কথা উক্ত হাদীসে বলা হয়েছে। আবার যারা জামাত শিবির করে তারা অনেকেই ভাবে যে তারাই হল সেই মুক্তিপ্রাপ্ত দলটি আর বাকী ইসলামী দল বা গোষ্ঠী গুলি সেই অভিশপ্ত ৭২ দলের মাঝে পড়েছে।
এরকম ভাবে প্রত্যেকে যে যে ইসলামী দল করে তারা ভাবে একমাত্র তারাই হল
হাদীসে উল্লেখিত সেই মুক্তিপ্রাপ্ত দল টি। আসলে উপরোক্ত হাদীস টির মূল
ব্যাখ্যা বা শরাহ না জানার কারনে আমাদের মাঝে অনেক বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। ঐ
হাদীসে যে হকপন্থী দলটির কথা বলা হয়েছে এটা হল আক্বীদার ক্ষেত্রে আহলে
সুন্নত ওয়াল জামাত যেটা আমাদের সকল মুসলিমদের আক্বীদা। আর যে অভিশপ্ত ৭২
দলের কথা বলা হয়েছে তারা হল রাফেজী, শিয়া, মুতাজিলা, খারেজী, কাদিয়ানী
প্রমুখ যে দল গুলি ইসলামের মূল আক্বীদা থেকে সরে গিয়ে অভিশপ্ত হয়েছে।
মূলত তাবেঈনদের যুগ থেকে ইসলামের মূল আক্বীদা থেকে সরে গিয়ে অনেক
অনৈসলামিক আক্বীদার উদ্ভব হয়েছিল যারা পরে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে
গিয়েছিল। তারাই হল সেই ৭২ দলের মাঝে অন্তর্ভুক্ত। আপনি যেই দেশের অধিবাসী
হন, রাজনৈতিক ভাবে বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জামাত শিবির হিযবুত তাহরীর,
চরমোনাইর পীরের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, মুফতি আমীনের ইসলামী ঐক্যজোট যে
কোন দলই করেন না কেন বা যে মাযহাব অনুসরন করুন বা লা মাযহাবী হন অর্থ্যাত্
আহলে হাদীস, সালাফী হন না কেন আপনি যদি আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আক্বীদা
কে Support করেন তাইলে আপনি অবশ্যই একজন মুসলিম ও উপরোক্ত হাদীসে উল্লেখিত
সেই একমাত্র মুক্তিপ্রাপ্ত দলটির মাঝে অন্তর্ভুক্ত হবেন।এখন আহলে সুন্নত
ওয়াল জামাতের আক্বীদার আক্বীদা টা কি ? কোন মুসলমানের মাঝে নিম্নলিখিত গুণ
গুলি থাকলে সে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের অন্তর্ভুক্ত বলে গন্য হবে।
১. কোন সাহাবীর সমালোচনা না করা এবং এমন আলোচনাও না করা যার দ্বারা কোন সাহাবীর মর্যাদা ক্ষূণ্ণ হয়।
২. নিজের ঈমানের উপর কখনো সন্দিহান না হওয়া।
৩. ইসলামী সরকারের বিরুদ্ধে কোন প্রয়াস না চালানো।
৪. ভাল মন্দ যা কিছু হয় তা সব আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয় এবং তাকদীরের উপর বিশ্বাস রাখা।
৫. কোন মুসলমান কে কাফের না বলা।
৬. কোন মুসলমান মারা গেলে তার জানাযার নামায পড়া।
৭. জান্নাতে মুসলমানরা আল্লাহকে দেখতে পাবে এই আক্বীদায় বিশ্বাস করা।
৮. একমাত্র আল্লাহই গায়েব/ভবিষ্যত্ জগতের খবর জানেন।
৯. ইসলাম ব্যতীত জাহান্নাম থেকে মুক্তি অসম্ভব।
১০. কবরবাসী থেকে সাহায্য প্রার্থনা করা শিরক।
১১. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মিরাজ স্বশরীরে সংঘঠিত হয়েছে।
১২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরপর আর কোন নবী আসবে না।
১৩. তিন খোদার দাবীদার এবং আল্লাহর পুত্র আছে বলে যারা দাবী করে তারা
কাফের। ঈসা আলাইহিস সাল্লাম ৪র্থ আসমানে জীবিত আছেন, উনি কেয়ামতের পূর্বে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একজন উম্মত হিসাবে আবার
পৃথিবীতে আসবেন এটা বিশ্বাস করা।
১৪. সকল নবী রাসূলরা নিস্পাপ এবং সকল নবীদের মুজেযা সত্য। সকল নবী রাসূলের উপর ঈমান আনতে হবে।
১৫. ওলী আউলিয়াদের কারামত সত্য তবে ওলী আউলিয়ারা সাহাবী রাযিআল্লাহু আনহুদের পর্যায়ভুক্ত নন।
১৬. কবরের আযাব সত্য, স্বশরীরে পুনরুথ্থান সত্য, মিযান পুলসিরাত সত্য।
১৭. হাশরের মাঠে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর
সুপারিশ বা শাফায়াত ছাড়া কোন মুসলমান জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না এটা
বিশ্বাস করা। এখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে অভিশপ্ত
৭২ দলের কথা বলেছেন তাদের সম্পর্কে একটু আলোচনা করবো। প্রথমেই মুতাজিলা:-
মুতাজিলারা বিশ্বাস করে জান্নাতে আল্লাহকে দেখা যাবে না। মুতাজিলারা কবরের
আযাব কে বিশ্বাস করে না।
শিয়া:- এরা মোট ২২ টি উপদলে বিভক্ত। শিয়াদের মধ্যে একমাত্র যাইদিয়া
সম্প্রদায় ছাড়া আর সকল সম্প্রদায় অনেক সাহাবীদের সম্পর্কে কুধারনা পোষণ
করে। খারেজী:- এরা হযরত আলী রাযিআল্লাহু আনহুকে কাফির বলে। খারেজীদের মতে
কোন মুসলমান কবীরা গুনাহ করলেই সাথে সাথে সে কাফির হয়ে যায় নাউযুবিল্লাহ এ
মতবাদে বিশ্বাস করে।
মুরাজিয়া:- এদের আক্বীদা হল কাফেররা যেমন নেক আমল দ্বারা জান্নাতে যেতে
পারবে না ঠিক তেমনি মুসলমানরাও কোন কবিরা গুনাহের কারনে জান্নাতে যেতে
পারবে না।
নাজারিয়া:- এরা আল্লাহ সুবহানাতায়ালার অনাদি বা আজালী সত্ত্বায়
বিশ্বাস করে না। এরা বলে কোরআন নাকি সৃষ্ট হয়েছে। জাবরিয়া:- এদের আক্বীদা
হল বান্দার কোন কাজ করার ইচ্ছা শক্তিটুকু পর্যন্ত নাকি নাই।
বাহাই ও কাদিয়ানী:- এরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
কে শেষ নবী বলে স্বীকার করে না। এরকম আরো বহু বিভ্রান্ত আক্বীদার অধিকারী
ইসলামের মাঝ থেকে বের হয়ে গেছে। কিয়ামতের আগ পর্যন্ত এরকম আরো বহু বাতিল
চিন্তা ধারা মুসলমানদের মাঝে অনুপ্রবেশ করবে। আল্লাহ সুবহানাতায়ালা আমাদের
সবাইকে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আক্বীদা কে শক্ত ভাবে আমৃত্যু ধরে রাখার
তওফীক দিক। আমিন।
তথ্যসূত্রঃ
[শাহ ওয়ালী উল্লাহ রহমাতুল্লাহ আলিইহির হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ খ: ১
পৃ: ১৭০, ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহমাতুল্লাহ আলাইহির ‘‘মিনহাজুস সুন্নাতিন
নাবাবিয়্যাহ’’ আব্দুল কাদের জিলানী রহমাতুল্লাহ আলিহির ‘গুনিয়াতুত
তালেবীন’ ]
বছরের শ্রেষ্ঠ ১০ দিনে করণীয় ১০ আমল
আল্লাহ তা‘আলা দয়ালু। তাই তিনি আপন বান্দাদের তওবার সুযোগ দিতে
ভালোবাসেন। তিনি চান বান্দারা ইবাদতের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভ করুক। এ
উদ্দেশ্যে তিনি আমাদের জন্য বছরে কিছু বরকতময় ও কল্যাণবাহী দিন রেখেছেন-
যাতে আমলের সওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি করা হয়। আমরা পরীক্ষার দিনগুলোতে
সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাই সবচে ভালো ফলাফল অর্জন করার জন্য। তবে কেন আখেরাতের
জন্য এসব পরীক্ষার দিনগুলোতেও সর্বাধিক প্রচেষ্টা ব্যয় করব না? এ
দিনগুলোতে আমল করা তো বছরের অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি নেকী ও
কল্যাণ বয়ে আনে। এমন দিনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য যিলহজ মাসের এই প্রথম
দশদিন। এ দিনগুলো এমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
যেগুলোকে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ দিন বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাতে আমলের প্রতি
তিনি সবিশেষ উদ্বুদ্ধ করেছেন। এ দিনগুলোর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে শুধু এতটুকুই
যথেষ্ট যে আল্লাহ তা‘আলা এর কসম করেছেন।
যে কারণে এই দশ দিন বছরের শ্রেষ্ঠ দশ দিন
১. আল্লাহ তা‘আলা এর কসম করেছেন : আল্লাহ
তা‘আলা যখন কোনো কিছুর কসম করেন তা কেবল তার শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদাই
প্রমাণ করে। কারণ, মহা সত্তা শুধু মহা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েরই কসম করেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘কসম ভোরবেলার। কসম দশ রাতের।’ {সূরা আল-ফাজর, আয়াত : ১-২}
আয়াতে ‘কসম দশ রাতের’ বলে যিলহজের দশকের প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে। এটিই
সকল মুফাসসিরের মত। ইবনে কাসীর রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
এ মতটিই সঠিক।
২ এসবই সেই দিন আল্লাহ যাতে তাঁর জিকিরের প্রবর্তন করেছেন : আল্লাহ
তা‘আ বলেন, ‘যেন তারা নিজদের কল্যাণের স্থানসমূহে হাযির হতে পারে এবং
তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু থেকে যে রিজিক দিয়েছেন তার ওপর নির্দিষ্ট
দিনসমূহে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে।’ {সূরা আল-হজ, আয়াত : ২৮} জমহূর
উলামার মতে, আয়াতে নির্দিষ্ট দিনসমূহ বলে যিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনকে
বুঝানো হয়েছে। এটিই ইবন উমর ও ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহুমার মত।
৩. রাসূলুল্লাহ দিনগুলোকে শ্রেষ্ঠ দিন বলে আখ্যায়িত করেছেন : যিলহজের
এই দিনগুলোকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়ার
শ্রেষ্ঠ দিন বলে আখ্যায়িত করেছেন। যেমন জাবির রাদিআল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত,
‘পৃথিবীর দিনগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিনগুলো হলো দশকের দিনসমূহ।
অর্থাৎ যিলহজের (প্রথম) দশদিন। জিজ্ঞেস করা হলো, আল্লাহর পথে জিহাদেও কি এর
চেয়ে উত্তম দিন নেই? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদেও এর চেয়ে উত্তম দিন
নেই। হ্যা, কেবল সে-ই যে (জিহাদে) তার চেহারাকে মাটিতে মিশিয়ে
দিয়েছে।’ [মুসনাদ বাযযার : ১১২৮; মুসনাদ আবী ই‘আলা : ২০৯০]
৪. এই দিনগুলোর মধ্যে রয়েছে আরাফার দিন : আরাফার
দিন হলো বড় হজের দিন। এটি ক্ষমা ও মাগফিরাতের দিন। জাহান্নাম থেকে মুক্তি
ও নাজাতের দিন। যিলহজের এই দশকে যদি ফযীলতের আর কিছু না থাকত তবে এ
দিবসটিই তার মর্যাদার জন্য যথেষ্ট হত। এ দিনের ফযীলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‘আরাফা দিবসই হজ’। [তিরমিযী : ৮৯৩; নাসায়ী : ৩০১৬]
৫. এতে রয়েছে কুরবানীর দিন : কোনো কোনো আলিমের মতে কুরবানীর দিনটি বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
‘আল্লাহর কাছে সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ দিন হলো কুরবানীর দিন অতপর
স্থিরতার দিন’। (অর্থাৎ কুরবানীর পরবর্তী দিন। কারণ, যেদিন মানুষ কুরবানী
ইত্যাদির দায়িত্ব পালন শেষ করে সুস্থির হয়।) [নাসায়ী : ১০৫১২; ইবন
খুযাইমা, সহীহ : ২৮৬৬]
৬. এ দিনগুলোতে মৌলিক ইবাদতগুলোর সমাবেশ ঘটে :
হাফেয ইবন হাজর রহিমাহুল্লাহ তদীয় ফাতহুল বারী গ্রন্থে বলেন,‘যিলহজের
দশকের বৈশিষ্ট্যের কারণ যা প্রতীয়মান হয় তা হলো, এতে সকল মৌলিক ইবাদতের
সন্নিবেশ ঘটে। যথা : সালাত, সিয়াম, সাদাকা, হজ ইত্যাদি। অন্য কোনো দিন
এতগুলো ইবাদতের সমাবেশ ঘটে না।’ [ফাতহুল বারী : ২/৪৬০]
|
এই দশটি দিনের আমল আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়
ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘এমন
কোনো দিন নেই যার আমল যিলহজ মাসের এই দশ দিনের আমল থেকে আল্লাহর কাছে অধিক
প্রিয়। সাহাবায়ে কিরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর পথে জিহাদও নয়? রাসূলুল্লাহ বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদও নয়। তবে যে ব্যক্তি তার জান-মাল নিয়ে আল্লাহর পথে যুদ্ধে বের হল এবং এর কোনো কিছু নিয়েই ফেরত এলো না (তার কথা ভিন্ন)।’ [বুখারী : ৯৬৯; আবূ দাউদ : ২৪৪০; তিরমিযী : ৭৫৭]
আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,‘এ দশ দিনে নেক আমল করার চেয়ে আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় ও মহান কোন আমল নেই। তাই
তোমরা এ সময়ে তাহলীল (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ), তাকবীর (আল্লাহু আকবার) ও
তাহমীদ (আল-হামদুলিল্লাহ) বেশি বেশি করে পড়।’ [মুসনাদ আমহদ : ১৩২;
বাইহাকী, শুআবুল ঈমান : ৩৪৭৪; মুসনাদ আবী আওয়ানা : ৩০২৪]
অন্য বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,‘যিলহজের (প্রথম) দশদিনের মতো আল্লাহর কাছে উত্তম কোনো দিন নেই। সাহাবীরা
বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আল্লাহর পথে জিহাদেও কি এর চেয়ে উত্তম দিন
নেই? তিনি বললেন, হ্যা, কেবল সে-ই যে (জিহাদে) তার চেহারাকে মাটিতে মিশিয়ে
দিয়েছে।’ [সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব : ২/১৫; মুসনাদ আবী আওয়ানা :
৩০২৩]
এ হাদীসগুলোর মর্ম হল, বছরে যতগুলো মর্যাদাপূর্ণ দিন আছে তার মধ্যে এ দশ
দিনের প্রতিটি দিনই সর্বোত্তম। রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এ দিনসমূহে নেক আমল করার জন্য তাঁর উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন।
তাঁর এ উৎসাহ প্রদান এ সময়টার ফযীলত প্রমাণ করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দিনগুলোতে বেশি বেশি করে তাহলীল ও তাকবীর পাঠ করতে
নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন ওপরে ইবন উমর রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীসে
উল্লেখ হয়েছে।
ইবন রজব রহিমাহুল্লাহ বলেন, উপরোক্ত হাদীসগুলো থেকে বুঝা যায়, নেক
আমলের মৌসুম হিসেবে যিলহজ মাসের প্রথম দশক হল সর্বোত্তম, এ দিবসগুলোয়
সম্পাদিত নেক আমল আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। হাদীসের কোনো কোনো
বর্ণনায় أَحَبُّ (‘আহাব্বু’তথা সর্বাধিক প্রিয়) শব্দ এসেছে আবার কোনো
কোনো বর্ণনায় أَفْضَلُ (‘আফযালু’ তথা সর্বোত্তম) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে।
অতএব এ সময়ে নেক আমল করা বছরের অন্য যে কোনো সময়ে নেক আমল করার থেকে বেশি
মর্যাদা ও ফযীলতপূর্ণ। এজন্য উম্মতের অগ্রবর্তী পুণ্যবান মুসলিমগণ এ
সময়গুলোতে অধিকহারে ইবাদতে মনোনিবেশ করতেন। যেমন আবূ ছিমান নাহদী বলেন,
‘তাঁরা অর্থাৎ সালাফ তথা পূর্বসূরীগণ দিনটি দশককে অনেক বেশি
মর্যাদাবান জ্ঞান করতেন : রমযানের শেষ দশক, যিলহজের প্রথম দশক এবং
মুহাররমের প্রথম দশক।'
এই সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগানোর ১০টি উপায়
প্রতিটি মুসলিমের উচিত ইবাদতের মৌসুমগুলোকে সুন্দর প্রস্তুতির
মাধ্যমে স্বাগত জানানো। যিলহজ মাসকে আমরা স্বাগত জানাতে পারি নিচের
কাজগুলোর মধ্য দিয়ে : এ দশ দিন যে আমলগুলো বেশি বেশি করা উচিতঃ
১. এই দশটি দিন কাজে লাগাতে দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা :
শুরুতেই যা করা সবার উচিত তা হল, এই দিনগুলোকে পুণ্যময় কাজ ও কথায়
সুশোভিত করার দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করা। যে ব্যক্তি কোনো কাজের সংকল্প করে
আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন। তার জন্য সাহায্যকারী উপায় ও উপকরণ প্রস্তুত
করে দেন। যে আল্লাহর সঙ্গে সত্যবাদিতা দেখায় আল্লাহ তাকে সততা ও সফলতায়
ভূষিত করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর যারা আমার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, তাদেরকে আমি অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আর নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সাথেই আছেন।’ {সূরা আল-আ‘নকাবূত, আয়াত : ৬৯}
২. হজ ও উমরা সম্পাদন করা : হজ
ও উমরা এ দুটি হলো এ দশকের সর্বশ্রেষ্ঠ আমল। যারা এ দিনগুলোতে হজ আদায়ের
সুযোগ পেয়েছেন তারা যে অনেক ভাগ্যবান তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আল্লাহ যাকে
তাঁর নির্দেশিত এবং রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত পন্থায় হজ বা উমরা করার তাওফীক দান করেন তার
পুরস্কার শুধুই জান্নাত। কারণ, আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক
বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,‘এক উমরা থেকে
আরেক উমরা এতদুভয়ের মাঝের গুনাহগুলোর কাফফারা এবং মাবরূর হজের প্রতিদান
কেবলই জান্নাত।’[বুখারী : ১৭৭৩; মুসলিম : ৩৩৫৫]
আর মাবরূর হজ সেটি যা পরিপূর্ণভাবে সম্পাদিত হয় রাসূলুল্লাহ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত পন্থায়। যাতে কোনো
রিয়া বা লোক দেখানো কিংবা সুনাম বা মানুষের প্রশংসা কুড়ানোর মানসিকতা
নেই। নেই কোনো অশ্লীলতা বা পাপাচারের স্পর্শ। যাকে বেষ্টন করে থাকে নেক কাজ
ও পুণ্যময় আমল।
৩. সিয়াম পালন করা : মুসলমানের
জন্য উচিত হবে যিলহজ মাসের এই মুবারক দিনগুলোতে যত বেশি সম্ভব সিয়াম পালন
করা। সাওম আল্লাহর অতি প্রিয় আমল। হাদীসে কুদসীতে সিয়ামকে আল্লাহ নিজের
সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন। আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ বলেছেন, সিয়াম
ছাড়া আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তার নিজের জন্য; শুধু
সিয়াম ছাড়া। কারণ, তা আমার জন্য। তাই আমিই এর প্রতিদান দেব। সিয়াম ঢাল
স্বরূপ।’[বুখারী : ১৯০৪; মুসলিম : ২৭৬২]
সাওম যে এক বড় মর্যাদাসম্পন্ন ও আল্লাহর কাছে প্রিয় আমল তা আমরা
অনুধাবন করতে পারি আমরাএ হাদীস থেকে। তবে রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফার দিনের সাওমের প্রতি বিশেষভাবে
গুরুত্বারোপ করেছেন এবং এর মর্যাদা বর্ণনা করেছেন। আবূ কাতাদা রাদিআল্লাহু
আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,‘আরাফার দিনের সাওম আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিগত ও আগত বছরের গুনাহের কাফফারা হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন।’ [মুসলিম : ১১৬৩]
এ হাদীসের ভিত্তিতে যিলহজের নয় তারিখ সাওম পালন করা সুন্নত। ইমাম নববী
রহিমাহুল্লাহ বলেন, এসব দিনে সাওম পালন করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ মুস্তাহাব।
কোনো কোনো দেশের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে মহিলাদের মাঝে একটি ধারণা প্রচলিত
আছে যে, যিলহজ মাসের সাত, আট ও নয় তারিখে সাওম পালন করা সুন্নত। কিন্তু
সাওমের জন্য এ তিন দিনকে নির্দিষ্ট করার কোনো প্রমাণ বা ভিত্তি নেই।
যিলহজের ১ থেকে ৯ তারিখে যে কোনো দিন বা পূর্ণ নয় দিন সাওম পালন করা যেতে
পারে।
৪. সালাত কায়েম করা : সালাত
অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ, সম্মানীত ও মর্যাবান আমল। তাই এ দিনগুলোতে আমাদের
সবার চেষ্টা করা উচিত ফরয সালাতগুলো জামাতে আদায় করতে। আরও চেষ্টা করা
দরকার বেশি বেশি নফল সালাত আদায় করতে। কারণ, নফল সালাতের মাধ্যমে বান্দা
আল্লাহর সবচে বেশি নৈকট্য হাসিল করে। আবূ হুরাইরা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার কোনো অলির সঙ্গে শত্রুতা
রাখে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আমার বান্দা ফরয ইবাদতের চাইতে আমার
কাছে অধিক প্রিয় কোনো ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভ করতে পারে না। আমার
বান্দা নফল ইবাদত দ্বারাই সর্বদা আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে। এমনকি
অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয়পাত্র বানিয়ে নেই যে,আমি তার কান হয়ে
যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমি তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। আর আমিই
তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমি তার পা হয়ে যাই, যা দিয়ে সে চলে।
সে আমার কাছে কোনো কিছু চাইলে আমি অবশ্যই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার
কাছে আশ্রয় চায় আমি তাকে অবশ্যই আশ্রয় দেই। আমি যে কোনো কাজ করতে চাইলে
তাতে কোনো রকম দ্বিধা-সংকোচ করি না, যতটা দ্বিধা-সংকোচ করি মুমিন বান্দার
প্রাণহরণে। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে থাকে অথচ আমি তার বেঁচে থাকাকে অপছন্দ
করি।’ [বুখারী : ৬৫০২]
৫. দান-সাদাকা করা : এ
দিনগুলোতে যে আমলগুলো বেশি বেশি দরকার তার মধ্যে অন্যতম হলো সাদাকা।
আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে সাদাকা দিতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে : ‘হে মুমিনগণ, আমি তোমাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তা হতে ব্যয় কর, সে দিন আসার পূর্বে, যে দিন থাকবে না কোনো বেচাকেনা, না কোনো বন্ধুত্ব এবং না কোনো সুপারিশ। আর কাফিররাই যালিম।’ {সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ২৫৪}
আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,‘সাদাকা সম্পদকে কমায় না, ক্ষমার মাধ্যমে আল্লাহ বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং কেউ আল্লাহর জন্য বিনয়ী হলে আল্লাহ তাকে উঁচু করেন।’ [মুসলিম : ৬৭৫৭]
৬. তাকবীর, তাহমীদ ও তাসবীহ পড়া : এসব
দিনে তাকবীর (আল্লাহু আকবার), তাহমীদ (আলহামদু লিল্লাহ), তাহলীল (লা ইলাহা
ইল্লাল্লাহ) ও তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) পড়া সুন্নত। এ দিনগুলোয়
যিকর-আযকারের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, হাদীসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবন উমর
রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘এ দশ দিনে নেক আমল করার চেয়ে আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় ও মহান কোনো আমল নেই। তাই তোমরা এ সময়ে তাহলীল (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ), তাকবীর (আল্লাহু আকবার) ও তাহমীদ (আল-হামদুলিল্লাহ) বেশি বেশি করে পড়।’[বাইহাকী, শুআবুল ঈমান : ৩৪৭৪; মুসনাদ আবী আওয়ানা : ৩০২৪]
তাকবীরের শব্দগুলো নিম্নরূপ : (আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।) উল্লেখ্য,
বর্তমানে তাকবীর হয়ে পড়েছে একটি পরিত্যাক্ত ও বিলুপ্তপ্রায় সুন্নত।
আমাদের সকলের কর্তব্য এ সুন্নতের পুনর্জীবনের লক্ষ্যে এ সংক্রান্ত ব্যাপক
প্রচারণা চালানো। হাদীসে উল্লিখিত হয়েছে,
‘যে ব্যক্তি আমার সুন্নতসমূহ থেকে একটি
সুন্নত পুনর্জীবিত করল, যা আমার পর বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে, তাকে সে পরিমাণ
সওয়াব দেওয়া হবে, যে পরিমাণ তার ওপর (সে সুন্নতের ওপর) আমল করা হয়েছে।
এতে (আমলকারীদের) সওয়াব হতে বিন্দুমাত্র কমানো হবে না।’ [তিরমিযী : ৬৭৭]
যিলহজ মাসের সূচনা থেকে আইয়ামে তাশরীক শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ তাকবীর
পাঠ করা সকলের জন্য ব্যাপকভাবে মুস্তাহাব। তবে বিশেষভাবে আরাফা দিবসের
ফজরের পর থেকে মিনার দিনগুলোর শেষ পর্যন্ত অর্থাৎ যেদিন মিনায় পাথর
নিক্ষেপ শেষ করবে সেদিন আসর পর্যন্ত প্রত্যেক সালাতের পর এ তাকবীর পাঠ করার
জন্য বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ ও আলী রাদিআল্লাহু
আনহুমা থেকে এ মতটি বর্ণিত। ইবন তাইমিয়া রহ. একে সবচেয়ে বিশুদ্ধ মত
বলেছেন। উল্লেখ্য, যদি কোনো ব্যক্তি ইহরাম বাঁধে, তবে সে তালবিয়ার সাথে
মাঝে মাঝে তকবীরও পাঠ করবে। হাদীস দ্বারা এ বিষয়টি প্রমাণিত। [ইবন
তাইমিয়াহ, মজমু‘ ফাতাওয়া : ২৪/২২০]
৭. পশু কুরবানী করা : এ
দিনগুলোর দশম দিন সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য কুরবানী করা সুন্নাতে
মুয়াক্কাদাহ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর নবীকে কুরবানী করতে নির্দেশ
দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি আপনার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায়
করুন ও কুরবানী করুন।’ {সূরা আল-কাউসার, আয়াত : ০২}
এই দশদিনের অন্যতম সেরা প্রিয় আমল হলো কুরবানী। কুরবানীর পশু জবাই ও
গরিবদের মধ্যে এর গোশত বিতরণের মাধ্যমে আল্লাহর বিশেষ নৈকট্য লাভ হয়। এর
দ্বারা গরিবদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ পায় এবং তাদের কল্যাণ সাধন হয়।
৮. গুনাহ থেকে দূরত্ব অবলম্বন করা : সৎ
কর্মের মাধ্যমে যেমন আল্লাহর নৈকট্য অর্জিত হয়, গুনাহের কাজের মাধ্যমে
তেমন আল্লাহ থেকে আল্লাহর রহমত ও করুণা থেকে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। মানুষ তার
নিজের করা অপরাধের কারণে কখনো আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়। তাই আমরা যদি
অপরাধ মার্জনা এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির প্রত্যাশী হই, তাহলে এ দিনগুলোতে
এবং এর শিক্ষা কাজে লাগিয়ে বছরের অন্য দিনগুলোতে গুনাহ পরিত্যাগ করতে
হবে। কেউ যখন জানতে পারেন কী বড় অর্জনই না তার জন্য অপেক্ষা করছে, তার
জন্য কিন্তু যে কোনো কষ্ট সহ্য করা সহজ হয়ে যায়।
৯. একনিষ্ঠ মনে তওবা : তওবার
অর্থ প্রত্যাবর্তন করা বা ফিরে আসা। যে সব কথা ও কাজ আল্লাহ রাব্বুল
আলামীন অপছন্দ করেন তা বর্জন করে যেসব কথা ও কাজ তিনি পছন্দ করেন তার দিকে
ফিরে আসা। সাথে সাথে অতীতে এ ধরনের কাজে লিপ্ত হওয়ার কারণে অন্তর থেকে
অনুতাপ ও অনুশোচনা ব্যক্ত করা। যিলহজের শুভাগমনের আগে সবচে বেশি গুরুত্ব
দেওয়া দরকার এ তওবা তথা সকল গুনাহ থেকে ফিরে আসার প্রতি। স্বার্থক তওবা
সেটি যার মধ্যে তিনটি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। যথা- প্রথম. গুনাহটি
সম্পূর্ণভাবে বর্জন করা। দ্বিতীয়. গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। এবং
তৃতীয়. এই গুনাহটি ভবিষ্যতে না করার সংকল্প করা।
"বাস্তবেই এটি তওবার সুবর্ণ
সময়। দয়াময় খোদা এ সময় বেশি বেশি তওবার তাওফীক দেন এবং অধিক পরিমাণে
বান্দার তওবা কবুল করেন। তিনি ইরশাদ করেন, ‘তবে যে তাওবা করেছিল, ঈমান
এনেছিল এবং সৎকর্ম করেছিল, আশা করা যায় সে সাফল্য অর্জনকারীদের
অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (কাসাস : ৬৭)
"তিনি আরও ইরশাদ করেন, ‘বল, ‘হে
আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে
নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি
ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ {যুমার : ৫৩}
অতএব হে মুসলিম ভাই ও বোন, আপনি এ দিনগুলোকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে
সচেষ্ট হোন। সময় চলে যাওয়ার পর আফসোস না করতে চাইলে যিলহজ মাস আসার আগেই
এতে অর্জনের জন্য প্রস্তুতি নিন।
অন্য সাধারণ আমল বেশি বেশি করা :
উপরে যে নেক আমলগুলোর কথা উল্লেখ করা হলো এসব ছাড়াও কিছু নেক আমল আছে যেগুলো দিনগুলোতে বেশি করা যায়ঃ
যেমন : কুরআন তেলাওয়াত, জিকির, দু‘আ, দান-সাদাকা,
পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচার, আত্মীয়তার হক আদায় করা, মা-বাবার সখী-সখার প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো,
সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করা, সালামের প্রচার ঘটানো,
মানুষকে খাবার খাওয়ানো, প্রতিবেশিদের প্রতি সদয় আচরণ করা, মেহমানকে সম্মান করা,
পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা, অন্যকে কষ্ট না দেওয়া,
অপর ভাইয়ের প্রয়োজন পুরা করা, অসাক্ষাতে অন্য ভাইয়ের জন্য দু‘আ করা,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরূদ পড়া, পরিবার ও সন্তানদের জন্য অর্থ ব্যয় করা,
যেমন : কুরআন তেলাওয়াত, জিকির, দু‘আ, দান-সাদাকা,
পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচার, আত্মীয়তার হক আদায় করা, মা-বাবার সখী-সখার প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো,
সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করা, সালামের প্রচার ঘটানো,
মানুষকে খাবার খাওয়ানো, প্রতিবেশিদের প্রতি সদয় আচরণ করা, মেহমানকে সম্মান করা,
পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা, অন্যকে কষ্ট না দেওয়া,
অপর ভাইয়ের প্রয়োজন পুরা করা, অসাক্ষাতে অন্য ভাইয়ের জন্য দু‘আ করা,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরূদ পড়া, পরিবার ও সন্তানদের জন্য অর্থ ব্যয় করা,
আরও যেসকল আমল করতে পারেন সেগুলো হল;
অধিনস্তদের প্রতি সদয় হওয়া,
ওয়াদা ও আমানত রক্ষা করা, হারাম জিনিস থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেওয়া,
সালাতগুলোর পরে আল্লাহর জিকির করা, সুন্দরভাবে অযূ করা, আযান ও ইকামতের মাঝখানে দু‘আ করা,
জুমাবারে সূরাতুল কাহফ পড়া, মসজিদে গমন করা, সুন্নত সালাতগুলো দায়িত্বশীলতার সঙ্গে আদায় করা,
ঈদগাহে গিয়ে ঈদুল আযহার সালাত আদায় করা, হালাল উপার্জন করা,
মুসলিম ভাইদের আনন্দ দেওয়া, দুর্বলদের প্রতি দয়ার্দ্র হওয়া, কৃপণতা পরিহার করা,
ভালো কাজে পথ দেখানো, ছেলে-মেয়েদের সুশিক্ষা দেওয়া, কল্যাণকাজে মানুষকে সহযোগিতা করা ইত্যাদি।
অধিনস্তদের প্রতি সদয় হওয়া,
ওয়াদা ও আমানত রক্ষা করা, হারাম জিনিস থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেওয়া,
সালাতগুলোর পরে আল্লাহর জিকির করা, সুন্দরভাবে অযূ করা, আযান ও ইকামতের মাঝখানে দু‘আ করা,
জুমাবারে সূরাতুল কাহফ পড়া, মসজিদে গমন করা, সুন্নত সালাতগুলো দায়িত্বশীলতার সঙ্গে আদায় করা,
ঈদগাহে গিয়ে ঈদুল আযহার সালাত আদায় করা, হালাল উপার্জন করা,
মুসলিম ভাইদের আনন্দ দেওয়া, দুর্বলদের প্রতি দয়ার্দ্র হওয়া, কৃপণতা পরিহার করা,
ভালো কাজে পথ দেখানো, ছেলে-মেয়েদের সুশিক্ষা দেওয়া, কল্যাণকাজে মানুষকে সহযোগিতা করা ইত্যাদি।
এসবের প্রতিটিই ঈমান ও আল্লাহর মুহাব্বত বৃদ্ধি করে ফলে আল্লাহও তাকে
বেশি ভালোবাসেন। এসবই একজন মুমিনের চরিত্র মাধুরীর অংশ। এসবের মাধ্যমে একজন
মানুষ প্রকৃত মানুষে পরিণত হয়। আল্লাহ এসবের মাধ্যমে দান করেন আত্মিক
প্রশান্তি- প্রতিটি আল্লাহ-ভোলা মানুষই যার শূন্যতায় ভোগে। আল্লাহ তা‘আলা
আমাদের সবাইকে সেসব ব্যক্তির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করুন যারা এই সুবর্ণ
সুযোগের সর্বোত্তম ব্যবহার করে। আমীন। Collected
পুরুষ জাতির বহু বিবাহ প্রথা কে ইসলামী শরীয়াহ আসলে কতটুকু সমর্থন করে ?
বহু বিবাহ প্রথা নিয়ে বর্তমান সমাজে অনেক কথাই হচ্ছে যে ইসলাম ধর্ম
নাকি পুরুষদের বহুবিবাহ করতে উৎসাহ দেয়, ইসলামী শরীয়াহ নাকি বহু বিবাহের
মাধ্যমে পুরুষদের কে উৎসাহ দেয় ঘরে সতীন ঢুকিয়ে সংসারে অশান্তি সৃষ্টি
করার। আচ্ছা আসলে ইসলামী শরীয়াহ বহু বিবাহ কে কতটুকু সমর্থন করে বা কোন
পুরুষ কি চাইলেই যত ইচ্ছা বিয়ে করতে পারবে এবং বহু বিবাহ করার পর একজন
পুরুষকে কিভাবে সংসার চালাতে হবে এই বিষয় গুলি নিয়ে আমি এখন আমার এই Note
এ বিস্তারিত আলোচনা করবো।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এর কন্যা ফাতেমা রাযিআল্লাহু আনহার নাম তো আমরা সবাই জানি।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফাতেমা রাযিআল্লাহু আনহা কে
খুব ভালবাসতেন। ফাতেমা রাযিআল্লাহু আনহা অনেক অনেক হাদীস বর্ণনা করেছেন।
ফাতেমী তসবীহ নামে যে তসবীহ টা আমরা ৫ ওয়াক্ত নামাযের পর ও রাতে ঘুমানোর
আগে পড়ি সেটা কিন্তু হযরত ফাতেমা রাযিআল্লাহু আনহা থেকেই বর্ণিত হয়েছে।
এমনকি ফাতেমা রাযিআল্লাহু আনহার প্রতি বেশি শ্রদ্ধা দেখাতে গিয়ে শিয়ারা
তাদের রাজ্য শাসন ব্যবস্থাকে ফাতেমী খিলাফত নামে অভিহিত করতো।
ফাতেমা
রাযিআল্লাহু আনহা জীবিত থাকা অবস্থায় আলী রাযিআল্লাহু আনহু ২য় বিয়ে
করতে চাইলে এটা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন -
"যে ব্যক্তি ফাতেমাকে কষ্ট দিবে সে আমাকে কষ্ট দিবে।" [তথ্যসূত্রঃ মেশকাত
শরীফ, আহলে বাইত অধ্যায়] ফাতেমা রাযিআল্লাহু আনহা একজন সুস্থ সবল সন্তান
দায়িনী মা ছিলেন। আলী রাযিআল্লাহু আনহুর ঘরে উনার কয়েকটি ছেলে মেয়ে ছিল।
যদি এমন হত যে ফাতেমা রাযিআল্লাহু আনহার কোন ছেলে মেয়ে হয়নি বা ফাতেমা
রাযিআল্লাহু আনহা অসুস্থতার কারনে সংসার চালাতে পারছেন না তাইলে আলী
রাযিআল্লাহু আনহু ফাতেমা রাযিআল্লাহু আনহা জীবিত থাকা অবস্থায় বিয়ে করতে
চাইলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলী কে কোন বাধা দিতেন
না। কিন্তু ঘরে একজন সুস্থ সবল সন্তান দায়িনী স্ত্রী রেখে আলী
রাযিআল্লাহু আনহু ২য় বিয়ে করবে এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম পছন্দ করেন নি। আলী রাযিআল্লাহু আনহু তাই ফাতেমা রাযিআল্লাহু আনহা
জীবিত থাকা অবস্থায় আর কোন বিয়ে করেননি। তবে ফাতেমা রাযিআল্লাহু আনহার
মৃত্যুর পর আলী রাযিআল্লাহু আনহু ২য় বিয়ে করেছিলেন। [ তথ্যসূত্রঃ
হায়াতুস সাহাবাহ রাযিআল্লাহু আনহু, হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ইউসুফ কান্ধলভী
রহমাতুল্লাহ আলাইহি, দারুল কিতাব, ৫০, বাংলাবাজার, ঢাকা- ১১০০]
আপনি হয়ত এখন বলবেন যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও তো বহু বিবাহ করেছিলেন।
ইসলামে
অনেক কিছুই জায়েজ তবে শোভন নয়। মা বাবার আপন চাচাত ফুফাত বোনকেও বিয়ে
করা ইসলামী শরীয়তে জায়েজ তবে এটা ইসলামে শোভন নয় বা ইসলাম কখনো এই
জাতীয় বিয়ে করতে উত্সাহ দেয় না। আপনি হয়ত এখন বলতে পারেন যে ইসলামী
শরীয়তে কেন তাইলে পিতার বা মাতার আপন চাচাত মামাত বোনকে বিয়ে করা জায়েজ
করেছে। এর কারন হল কখনো যদি কোন মুসলিম উনাদের কাউকে বিয়ে করেই ফেলে তাইলে
যেন এটা কোন হারাম কাজ না হয়। সত্যিকথা বলতে কি ইসলাম খুব কম জিনিসকেই
হারাম ঘোষনা করছে। যেমন সমুদ্রের সকল মাছ খাওয়াই কিন্তু ইসলামী শরীয়তে
হালাল কিন্তু এখন মাছ বলতে কোনটাকে বুঝাবে। এই প্রশ্নের উত্তর ইসলাম
জেলেদের হাতে ছেড়ে দিয়েছে। জেলেরা সমুদ্রের যে সকল মাছকে হিংস্র মাছ বলবে
এই জাতীয় মাছ ছাড়া আর সকল মাছ খাওয়াই হালাল।
আচ্ছা এখন
আমরা দেখি যদি একটা লোক তার ১ম স্ত্রীর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে ২য় বিয়ে
করে তাইলে এর পরে তার বৈবাহিক জীবনটাকে কীভাবে চালাবে। গ্রাম এলাকায় এক
সময় যৌথ পরিবার বা join Family এর প্রচলন ছিল। বাপ চাচারা একসাথে থাকতো
একই হাড়িতে ভাত রান্না হত। যদি কোন ব্যক্তি ২য় বিয়ে করেই ফেলে তাইলে
অবশ্যই তাকে তার ২ স্ত্রীকে ১ম স্ত্রীর সাথে একই ছাদের নিচে থাকতে হবে
অর্থ্যাৎ join Family এর মত। আমাদের দেশে দেখা যায় যেই স্বামী ২য় বিয়ে
করে সে শুধু তার যৌবণবতী স্ত্রীর সাথেই সংসার করে। আর ১ম স্ত্রীর সংসারে
মাসে ১ বার যায়, মাত্র ২-৩ দিন থাকে। ফলে তার ১ম স্ত্রীর ছেলে মেয়েরাও
পিতাকে ঐরকম ভাবে কাছে পায় না। অর্থ্যাৎ ধরেন ঐ ব্যক্তির যৌবণাবতী স্ত্রী
থাকে মিরপুরে আর বিগত যৌবনা ১ম স্ত্রী থাকে রামপুরায়। দেখা যায় যে স্বামী
ব্যক্তিটি মাসের ২৫ দিনই যৌবণবতী স্ত্রীর সাথে মিরপুরে থাকে আর মাসের ৫
দিন রামপুরায় যেয়ে বিগত যৌবনা ১ম স্ত্রীর সাথে থাকে। যা একটা সুস্পষ্ট
হারাম কাজ। কিন্তু স্বামী ব্যক্তিটি যদি মাসের ১৫ দিন ১ম স্ত্রীর সাথে থাকে
আর মাসের বাকী ১৫ দিন ২য় স্ত্রীর সাথে থাকে এবং টাকা পয়সা ভালবাসা উভয়
স্ত্রীর সংসারেই সমান ভাবে ব্যয় করে তাইলে ঐ ব্যক্তির ২য় বিয়ে করা
জায়েজ হবে। আর স্বামী যদি শুধু যৌবণবতী স্ত্রীর সংসারেই বেশি সময় ও টাকা
পয়সা দেয় তাইলে কোরআন হাদীস অনুসারে ঐ ব্যক্তি তার মৃত্যুর পর সরাসরী
জাহান্নামে চলে যাবে। এখন সে দুনিয়ার জীবনে যত নামায-কালাম-হজ্জই করে
থাকুক না কেন উভয় স্ত্রীর হক সঠিক ভাবে পালন না করার কারনে মৃত্যুর পর সে
নিশ্চিত জাহান্নামী।
আল-কোরআনে পুরুষদের বহু বিবাহ নিয়ে যে
আয়াতটি এসেছে সেটা হল- “তবে নারীগণের মধ্য থেকে মনমতো বিয়ে করে নাও
দুইটি,তিনটি অথবা সর্বোচ্চ চারটি;আর যদি আশংকা করো তাদের মধ্যে ন্যায়
বিচার করতে পারবে না তাহলে শুধুমাত্র একটাই।”(নিসা ৪:৩) এখন আমরা যদি
আল-কোরআনের আরেকটি আয়াতের দিকে লক্ষ্য করি সেইখানে বলা হয়েছে- “তোমরা
ইচ্ছে করলেও স্ত্রীদের মধ্যে ন্যায় এবং সমতা সাধন করতে পারবে না।”(নিসা
৪:১২৯) অর্থ্যাৎ পুরুষদের বহু বিবাহ করার যে প্রধান শর্ত
স্ত্রীদের
মাঝে সমতা রক্ষা করা আসলে এটা একটা খুব কঠিন কাজ। এই ২ টি আয়াত থেকে
কিন্তু আমরা স্পষ্ট ভাবে বুঝতে পাই যে পুরুষদের কে একটি বিয়ে করতেই ইসলাম
উৎসাহ দিচ্ছে।
এখন কেউ যদি বলে আমার ২য় বিয়ে করার পর আমি
এইভাবে সংসার চালাত পারবো না বা উভয় স্ত্রীর মাঝে আমার সময়, অর্থ,
ভালবাসা সঠিক ভাবে ব্যয় করতে পারবো না তাইলে ঐ ব্যক্তির ২য় বিয়ে করা
জায়েজ হবে না। এখন ঐ ব্যক্তি যত ধনীই হোক না কেন বা যত বীর্যবান পুরুষই
হোক না কেন। [ তথ্যসূত্রঃ হানাফী মাযহাবের মূল ফিকাহের কিতাব হেদায়া,
ইমাম বুরহান উদ্দিন আলী ইবনে আবু বকর রহমাতুল্লাহ আলাহি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
বাংলাদেশ ]
ইসলামের ১ম যুগে প্রচুর জিহাদ হইছিল। তখন অনেক
নারীই বিধবা হয়েছিলেন। তাই সাহাবীরা বাধ্য হয়ে বহু বিবাহ করেছিলেন।
কিন্তু এর মানে এই নয় যে সাহাবীরা বহু বিবাহ করতে উম্মাহ কে উৎসাহ
দিয়েছেন। কিন্তু পরবর্তীতে তাবেইনদের সময়ে বহু বিবাহ টা কমে আসে।
ভারতবর্ষে
যার মাধ্যমে লাখ লাখ হিন্দু মুসলমান হয়েছিলেন, অনেক সাধারন মুসলমান যার
মাধ্যমে এহসানের পর্যায়ে চলে গিয়েছিলেন সেই খাজা মহীউদ্দিন চিশতী
রহমাতুল্লাহ আলাইহি জীবনে মাত্র ১টি বিয়ে করেছিলেন। ওলী কুলের শিরোমনী
বায়েজীদ বোস্তামী রহমাতুল্লাহ আলাইহিও উনার জীবনে মাত্র ১টি বিয়ে
করেছিলেন। শাহজালাল রহমাতুল্লাহ আলাইহি তো জীবনে বিয়েই করেননি। [
তথ্যসূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া, এমদাদিয়া লাইব্রেরী ]
ইসলাম
কখনই পুরুষদের কে বহু বিবাহ করতে উৎসাহ দেয় নি বরং ইসলাম পুরুষদের কে এক
স্ত্রীর মাঝেই সন্তুষ্ট থাকতে বলেছে। আর তাছাড়া ইসলামের বহু বিবাহের পর
বৈবাহিক জীবনের শর্ত গুলি এত জটিল যে খুব কম মুসলমানের পক্ষেই সম্ভব ২ টি
বিয়ে করা। আপনি হয়ত বলতে পারেন যে স্বামী যদি তার ১ম স্ত্রীকে তালাক
দিয়ে ২য় বিয়ে করে। এর উত্তরে আমি বলব যুক্তিযুক্ত কোন কারন ছাড়া বা ১ম
স্ত্রীর কোন গুরুতর অন্যায় ছাড়া শুধু ২য় বিয়ে করার জন্য কেউ যদি তার ১ম
স্ত্রীকে তালাক দেয় তাইলে তার এই বিনা কারনে ১ম স্ত্রীকে তালাক দেয়ার
জন্য মাযহাব ভেদে ঐ স্বামী কে ৪০-৮০ টি বেতের বারি দেয়া হবে। [তথ্যসূত্রঃ
ফতোয়ায়ে আলমগিরী] আর কেউ যদি ২য় বিয়ে করেই তাইলে এক্ষেত্রে ইসলাম তাকে
উৎসাহ দেয় সে যেন সমাজের কোন অসহায় বিধবা বা তালাক প্রাপ্তা নারীকে বিয়ে
করে যেই নারীকে সমাজের কেউ বিয়ে করতে চাচ্ছে না। কিন্তু ঘরে যৌবণবতী
সন্তান দায়িনী স্ত্রীকে রেখে তরতাজা ২৪ বছরের আমেরিকান নাগরিকত্ব ধারী কোন
মেয়েকে বিয়ে করবে আর এই জাতীয় বিয়ে করার ক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়াহ কখনই
উৎসাহ দেয় না।
আমরা জানি ইউরোপ আমেরিকার মানুষদের যৌণ
চাহিদা খুব বেশী। Sex industry নামে ইউরোপ আমেরিকায় বিশাল বাজার আছে।
ইউরোপ আমেরিকার প্রত্যেক টা ব্যক্তি তার জীবনে বান্ধবী, বন্ধুর স্ত্রী, যৌণ
কর্মী, লিভ টুগেদার এরকম ভাবে মিলিয়ে গড়ে ৮-১০ টা নারীর সাথে সম্পর্ক
করে কোন সামাজিক স্বীকৃতি ছাড়াই। এত মেয়েদের সাথে একটি পুরুষের এই
সম্পর্ক গুলি চলতে থাকে ঘরে বৈধ স্ত্রী রেখেই। মূলত এই বহু বিবাহ প্রথাটা
দরকার ইউরোপ আমেরিকার জনগনের জন্য।
No comments:
Post a Comment