পাঁচবিবির নামকরণঃ-
পাঁচবিবি নামটির প্রথম সূত্রপাত সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরা হল। এ অঞ্চলের নাম মধ্য যুগ
এবং ব্রিটিশ শাসনামলের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে পরিবর্তীত হয়েছে। তবে
প্রাচীণ তথা আদি পর্বে যে নাম এই অঞ্চলে ছিল তা সে যুগে কোনো পরিবর্তন
হয়নি। কিন্তু এই নামটির একটি অংশ পরবর্তীতে থেকে গিয়ে বিভিন্ন সময়ের
প্রেক্ষিতে 'পাঁচবিবি' নামটি হয়েছে যার মধ্যে অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতাব্দির
সম-সাময়িক সময়ে সুনামধন্য শ্রদ্ধেয় ধার্মিক ব্যক্তি ও তাঁহার পাঁচ জন
স্ত্রী সহ প্রাচীণ জম্ভ নদী সংলগ্ন (ছোট যমুনা) মাজারের কিংবদন্তীও
বিদ্যমান, যা এই সব ইতিহাস পরবর্তীতে বেশী প্রচার হয়েছে।
পাঁচবিবি নামের সাথে সরাসরি সম্পর্ক দেখা যায় 'পঞ্চনগরী' নামের মধ্যে।
যেহেতু ‘পঞ্চনগরী বিষয়’ এখানে অবস্থিত সেহেতু দেড়-দুই হাজার বছরের পুরনো
নগর যার স্থাযীত্ব প্রায় এক হাজার বছর টিকে ছিল আর সেটি পরবর্তিতে চলমান
থাকবেনা তা হয়না তবে সেক্ষেত্রে ঐ যুগের পরের সময়ের অন্যান্য বিষয়ও
সাদৃশ্যগত কাহিনী যোগ হয়েছে বলে মনে করা হয়। এ সম্পর্কে সঠিক গবেষণা হয়েছে,
তার বর্ণনা নিম্নে করা হল, এতে আরো একটি বিষয় যে, 'পঞ্চনগরী' বিষয় নিয়ে
অনেক বিকৃতিময় ইতিহাস সাম্প্রতিক সময়ে উপস্থাপন হচ্ছে।
পাথরঘাটা ও পাঁচবিবি সম্পর্কে ভারত উপমহাদেশের বিখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক এবং
নৃতাত্ত্বিকবিদ ড: শ্রী শ্রী নীহাররঞ্জন রায় তার গবেষণার সর্বশেষ ফলাফল
গুলো যা তিনি তার বিখ্যাত একটি বইয়ের শেষে লিপিমালা-সুচিতে তথ্য সন্নিবেশ
করেছেন। সেখানকার মধ্যে পাথরঘাটা সম্পর্কে বিবৃতিতে তিনি বলেছেন।:-
"দশম শতক:- প্রথম মহিপালের বেলওয়া তাম্রশাসন (রাজঙ্ক ২২) -
সাহিত্য-পরিসৎ-পত্রিকা, ১৩৫৪, ৩য়-৪র্থ সংখ্যা, ৪১-৫৬ পৃ।
এই লিপিদত্ত ভূমিকা অবস্থিত ছিল পঞ্চনগরী বিষয়ে পুন্ডরিকাম মন্ডলে, এবং
ফানিতে বীথীতে। লিপি নির্গত হইয়াছিল শ্রীসাহসগণ্ডনগর সমাবাসিত
শ্রীমজ্জয়স্কন্ধাবার হইতে। পঞ্চনগরীর অবশেষ এখনও "পাঁচবিবি" নামের মধ্যে
বিদ্যমান। ভূমির মাপের নূতন প্রমাণের উল্লেখও আছে এই লিপিতে "দশোত্তর
শতদ্বয় প্রমাণ, নবতদুত্তরচতুঃশত প্রমাণ, একপঞ্চাশদুত্তর শত প্রমান"। এই
প্রমান কিসের প্রমান? বেলওয়া (প্রাচীন বেল্লাবা) গ্রাম এবং তাহার
চতুষ্পার্শ্বে নানা প্রত্নচিহ্ন এখনও বিদ্যমান। লিপিতে উল্লিখিত গণেশ্বর কি
গণেশ্বর মন্দির? অনেক গুলি দীঘির উল্লেখও লিপিটিতে আছে। এই লিপি দূতক
ছিলেন মন্ত্রী লক্ষীধর। শিল্পী ছিলেন পোষালীগ্রামাগত চন্দ্রাদিত্যের পূত্র
শ্রীপূষ্যাদিত্য। শিল্পী মাহীধর ও শিল্পী শশীদেবও ছিলেন পোষালী গ্রামাগত।
এই সব তথ্য সমস্তই নুতন এবং গ্রন্থের যথাস্থানে সন্নিবিষ্ট হওয়া উচিত।"
"বাঙ্গালীর ইতিহাস,আদি পর্ব, নীহাররঞ্জন রায়,প্রথম সংস্করন,মাঘ ১৩৫৬।"
তিঁনি নিজেই বলে গেছেন যে,পরবর্তীতে যেন সব গবেষণা, বই, আর্টিকেলে এই তথ্য
যুক্ত করা হয়।
উপরের এই তথ্য দ্বারা আমরা পাঁচবিবি নামের একটি অকাট্য দালিল পাই। পঞ্চনগরী
যে পাথরঘাটা তা আবারো ঐতিহাসিকগণ পাঁচবিবি নামের মাঝে খুঁজে পান। দশম
শতকের প্রথম মহিপালের বেলওয়া তাম্রশাসন থেকে পাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ভূমির মাপন
সহ বিভিন্ন প্রমাণ দিয়ে বলা আছে এর অবস্থান। আর তাই পঞ্চনগরী নামটিই
অবশেষে বিদ্যমান চিহ্ন যে পাঁচবিবি নামের সাথে আদি উৎপত্তিগত সম্পর্ক রয়েছে
বলে ঐতিহাসিকগণ প্রমান করেছেন। অধিকিন্তু, একটি কথা যে পঞ্চনগরীর ধ্বংস
প্রাপ্ত ঢিবি (উচু স্থান বা ধাপ) গুলো শত শত বছর অতিক্রম করে পরবর্তিতে
পঞ্চঢিবি > পঞ্চবিবি > পাঁচবিবি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। মূলত হাল আমলে
ধর্মীয় একজন ব্যক্তি সংক্রান্ত্ কাহিনী সংযুক্ত হয়েই পাঁচবিবি নামটির
সংমিশ্রণে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
# তথ্য সূত্র – প্রত্নবাংলার 'পাঁচবিবির ইতিবৃত্ত, পাথরঘাটা-মহিপুর অঞ্চলের
ঐতিহাসিক সমীক্ষা' থেকে সংক্ষেপে প্রকাশিত।
No comments:
Post a Comment